কোচিং থেকে বের হয়ে দেখি,দুপুরের তপ্ত রৌদের প্রখরতা অনেকটাই কমে এসেছে। বিকেলের হালকা রোদেলা আলোটা বেশ ভালোই লাগছে। হঠাৎ ঠান্ডা বাতাসের ঝাপটায় মনটা আজ ফুরফরে লাগছে।
বাসায় ফিরতে হবে,না হলে মা অনেক চিন্তা করবেন। বাস গুলোর আজ কি হল,আজ একটা-কেও দেখতে পারছিনা।
"অ্যাঁইজকা আর কোনো বাস আইবোনা" পিছনে ঘুরে দেখি এক মধ্য বয়স্ক লোক কথা বলছে।
তার পাশে অনেক লোকজন জড়ো হয়েছে,কি হয়েছে তা জানার জন্য?
ব্যপারটা কি, তা জানতে আমি ওই ভিড়ের কাছে চলে গেলাম।
মধ্য-বয়স্ক:আজ মালিক-সমিতির ধর্মঘট। বাস অ্যাঁইজকা চলবো না।
মনে মনে মালিক-সমিতির লোকদের একশ একটা গালি দিয়ে,ওখান থেকে চলে আসলাম।
পকেটে হাত দিয়ে দেখি আছে,মাএ ১০টাকা। কি করব কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। পরঃক্ষণে সিদ্ধান্ত নিলাম,এই টাকা দিয়ে কিছু একটা কিনে খেতে খেতে হেঁটে বাড়ি যাব। কিছুক্ষণ হাঁটতেই হাঁপিয়ে উঠলাম। আসলে তেমন হাঁটার অভ্যাস ছিল না আমার। খাওয়া,ঘুম আর পড়া বাদে বাসায় আার কোনো কাজ করতে হতো না। নিজেকে পোল্ট্রি ফার্মের মুরগির মতো মনে হয় ।
পাশেই একটা পার্ক ছিল। মনে মনে ভাবলাম,একটু বিশ্রাম নিয়ে আবার যাওয়া যাক। কিছু আমার বয়েসি ছেলেপুলে ক্রিকেট খেলছিল। পার্কের একপাশে বসে মনমুগ্ধের মতন তাদের খেলা দেখছিলাম। কিছুক্ষণ পরে হঠাৎ তারা খেলা থামিয়ে,চলে যেতে লাগলো। পরঃক্ষণে লক্ষ্য করলাম,চারদিকে অন্ধকার নেমে আসছে।খেলা দেখতে দেখতে কখন যে সন্ধ্যা হয়ে এসেছে বুঝতেই পারিনি। বাসার কথা মনে হতেই ভয়ে একেবারে কুঁকড়ে গিয়েছিলাম।আজ আর আমার রক্ষা নাই।
বাসায় যাবার পর কি হবে,তা চিন্তা করতে করতে দ্রুত গতিতে পা চালাতে লাগালাম। রাস্তার উপর দিয়ে গাড়ি গুলো খুব দ্রুত বেগে চলে যাচ্ছিলো। ভয়ে আমার অবস্হা এতটাই খারাপ ছিলো যে,গাড়ি গুলোর চেয়ে দ্রুত গতিতে হাঁটার চেষ্টা করছিলাম।
সংসদের পাশ দিয়ে যাবার সময় কিছু মহিলাকে দেখলাম বাজে অঙ্গ-ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। বন্ধুদের বৈদলতে আগেই পেঁকে গিয়েছিলাম বলে,তাই আর চিনতে অসুবিধা হলো না যে,এরা পতিতা। টাকার বিনিময়ে নিজের দেহটাকে অন্যের কাছে তুলে দেয়।
তাঁদের মধ্য থেকে এক মেয়ে আমাকে ইশারা দিয়ে কাছে ডাকছে। আমি না দেখার ভান করে,চলে যেতে থাকলাম। কিছু বুঝে উঠার আগেই,এক প্রচন্ড হ্যাঁচকা টান দিয়ে তার দিকে সে টেনে নিল। আমার চারপাশে কয়েকজন পতিতা জড়ো হলো। দেখতে দেখতে সেখানে একটা ছোট খাটো জটলার মতন তৈরি হল। ওরা সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। এমন ভাবে দেখছে যেন,আমি কোনো খাবারের বস্তুু।
আমাকে নিয়ে তারা বিভিন্ন কথা বলছিল,আর মিটিমিটি করে হাসছিল। একজন আমার কাপড় ধরে টানাটানি করছিল। আসলে ঠিক টানাটানি নয়:আমার পকেটে হাত ঢুকিয়ে টাকা-পয়সা খুঁজছিল। পকেট থেকে খালি হাতটা বের করে,তার মুখটা বিকৃত করে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করছিল। তাদের এই আকশ্মিক আচরণে ভয়ে আমার কান্না পাচ্ছিল। নিজেকে একটু সামলে নিতে না নিতেই,সাঁজোরে এক বাঁশির শব্দে কান ধাঁধিয়ে গেল। কিছুক্ষণের মধ্যেই ওই জায়গাটায় হুঁটুপুটু বেধেঁ গেল। সবাই এদিক সেদিক দৌড়াতে শুরু করে দিয়েছে। ক্রমশই শব্দটা কাছে আসতে থাকলো। হঠাৎ-ই এক মেয়ের কথার স্বরে আমি সম্বিত ফিরে পেলাম।
মেয়েটি:এ্যাইখানে দাঁড়ায়ে থাকলে,পুলিশ ধ্যইরা নিয়ে য্যাইবো।
কি করবো তখন কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না!!
মেয়েদের একটি দল ছুঁটে পালিয়ে যাচ্ছিল। খাঁকি পোশাকের লোকগুলোর চেহারা কিছুটা স্পষ্ট হতেই,ভয়ে আমার শিড়দাঁড়া দিয়ে ঠান্ডা স্রোত বেয়ে গেল। সাত-পাঁচ না ভেবে ছোট্ট দলটার দিকে প্রাণপণে ছুটতে লাগলাম।
শরীরে প্রচন্ড ব্যথা,আমার পাশের রুমে একসাথে কয়েকটা মেয়ের আর্তনাত কানে ভেসে আসছে। কাল রাতে পুলিশের লোকগুলোর বেধড় লাঠির আঘাতে চিহ্নগুলো লাল টকটকে হয়ে আছে।
সাংবাদিকদের বদৈলতে বাবা-মা থানায় ছুটে এসেছেন। মার দু'চোখ বেয়ে অনবড়ত পানি পড়ছিল। বাবাকে দেখলাম থানার ওসির সাথে কথা বলতে। বাবার কিছু কথা কানে ভেসে আসলো:ও'মন কুলাংকার ছেলের জন্য আমার ঘরে কোনো জায়গা নেই। বাবা-মা চলে যাবার সময় বাবার চোখে ছিল আমার জন্য লজ্জা আর ঘৃণা।
প্রথমে বাবা-মা, ও একে একে সকল আত্মীয়-স্বজন,এই সমাজ আমার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া আজ আমার ঠায় হয়েছে ফুটপাতে। এক সময় চিরচেনা মুখগুলোই আজ অপরিচিত। আর আজ অপরিচিত মুখগুলোই হয়ে উঠেছে চিরচেনা।
#কল্পবাজ
২০/১১/১৫
বাসায় ফিরতে হবে,না হলে মা অনেক চিন্তা করবেন। বাস গুলোর আজ কি হল,আজ একটা-কেও দেখতে পারছিনা।
"অ্যাঁইজকা আর কোনো বাস আইবোনা" পিছনে ঘুরে দেখি এক মধ্য বয়স্ক লোক কথা বলছে।
তার পাশে অনেক লোকজন জড়ো হয়েছে,কি হয়েছে তা জানার জন্য?
ব্যপারটা কি, তা জানতে আমি ওই ভিড়ের কাছে চলে গেলাম।
মধ্য-বয়স্ক:আজ মালিক-সমিতির ধর্মঘট। বাস অ্যাঁইজকা চলবো না।
মনে মনে মালিক-সমিতির লোকদের একশ একটা গালি দিয়ে,ওখান থেকে চলে আসলাম।
পকেটে হাত দিয়ে দেখি আছে,মাএ ১০টাকা। কি করব কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। পরঃক্ষণে সিদ্ধান্ত নিলাম,এই টাকা দিয়ে কিছু একটা কিনে খেতে খেতে হেঁটে বাড়ি যাব। কিছুক্ষণ হাঁটতেই হাঁপিয়ে উঠলাম। আসলে তেমন হাঁটার অভ্যাস ছিল না আমার। খাওয়া,ঘুম আর পড়া বাদে বাসায় আার কোনো কাজ করতে হতো না। নিজেকে পোল্ট্রি ফার্মের মুরগির মতো মনে হয় ।
পাশেই একটা পার্ক ছিল। মনে মনে ভাবলাম,একটু বিশ্রাম নিয়ে আবার যাওয়া যাক। কিছু আমার বয়েসি ছেলেপুলে ক্রিকেট খেলছিল। পার্কের একপাশে বসে মনমুগ্ধের মতন তাদের খেলা দেখছিলাম। কিছুক্ষণ পরে হঠাৎ তারা খেলা থামিয়ে,চলে যেতে লাগলো। পরঃক্ষণে লক্ষ্য করলাম,চারদিকে অন্ধকার নেমে আসছে।খেলা দেখতে দেখতে কখন যে সন্ধ্যা হয়ে এসেছে বুঝতেই পারিনি। বাসার কথা মনে হতেই ভয়ে একেবারে কুঁকড়ে গিয়েছিলাম।আজ আর আমার রক্ষা নাই।
বাসায় যাবার পর কি হবে,তা চিন্তা করতে করতে দ্রুত গতিতে পা চালাতে লাগালাম। রাস্তার উপর দিয়ে গাড়ি গুলো খুব দ্রুত বেগে চলে যাচ্ছিলো। ভয়ে আমার অবস্হা এতটাই খারাপ ছিলো যে,গাড়ি গুলোর চেয়ে দ্রুত গতিতে হাঁটার চেষ্টা করছিলাম।
সংসদের পাশ দিয়ে যাবার সময় কিছু মহিলাকে দেখলাম বাজে অঙ্গ-ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। বন্ধুদের বৈদলতে আগেই পেঁকে গিয়েছিলাম বলে,তাই আর চিনতে অসুবিধা হলো না যে,এরা পতিতা। টাকার বিনিময়ে নিজের দেহটাকে অন্যের কাছে তুলে দেয়।
তাঁদের মধ্য থেকে এক মেয়ে আমাকে ইশারা দিয়ে কাছে ডাকছে। আমি না দেখার ভান করে,চলে যেতে থাকলাম। কিছু বুঝে উঠার আগেই,এক প্রচন্ড হ্যাঁচকা টান দিয়ে তার দিকে সে টেনে নিল। আমার চারপাশে কয়েকজন পতিতা জড়ো হলো। দেখতে দেখতে সেখানে একটা ছোট খাটো জটলার মতন তৈরি হল। ওরা সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। এমন ভাবে দেখছে যেন,আমি কোনো খাবারের বস্তুু।
আমাকে নিয়ে তারা বিভিন্ন কথা বলছিল,আর মিটিমিটি করে হাসছিল। একজন আমার কাপড় ধরে টানাটানি করছিল। আসলে ঠিক টানাটানি নয়:আমার পকেটে হাত ঢুকিয়ে টাকা-পয়সা খুঁজছিল। পকেট থেকে খালি হাতটা বের করে,তার মুখটা বিকৃত করে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করছিল। তাদের এই আকশ্মিক আচরণে ভয়ে আমার কান্না পাচ্ছিল। নিজেকে একটু সামলে নিতে না নিতেই,সাঁজোরে এক বাঁশির শব্দে কান ধাঁধিয়ে গেল। কিছুক্ষণের মধ্যেই ওই জায়গাটায় হুঁটুপুটু বেধেঁ গেল। সবাই এদিক সেদিক দৌড়াতে শুরু করে দিয়েছে। ক্রমশই শব্দটা কাছে আসতে থাকলো। হঠাৎ-ই এক মেয়ের কথার স্বরে আমি সম্বিত ফিরে পেলাম।
মেয়েটি:এ্যাইখানে দাঁড়ায়ে থাকলে,পুলিশ ধ্যইরা নিয়ে য্যাইবো।
কি করবো তখন কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না!!
মেয়েদের একটি দল ছুঁটে পালিয়ে যাচ্ছিল। খাঁকি পোশাকের লোকগুলোর চেহারা কিছুটা স্পষ্ট হতেই,ভয়ে আমার শিড়দাঁড়া দিয়ে ঠান্ডা স্রোত বেয়ে গেল। সাত-পাঁচ না ভেবে ছোট্ট দলটার দিকে প্রাণপণে ছুটতে লাগলাম।
শরীরে প্রচন্ড ব্যথা,আমার পাশের রুমে একসাথে কয়েকটা মেয়ের আর্তনাত কানে ভেসে আসছে। কাল রাতে পুলিশের লোকগুলোর বেধড় লাঠির আঘাতে চিহ্নগুলো লাল টকটকে হয়ে আছে।
সাংবাদিকদের বদৈলতে বাবা-মা থানায় ছুটে এসেছেন। মার দু'চোখ বেয়ে অনবড়ত পানি পড়ছিল। বাবাকে দেখলাম থানার ওসির সাথে কথা বলতে। বাবার কিছু কথা কানে ভেসে আসলো:ও'মন কুলাংকার ছেলের জন্য আমার ঘরে কোনো জায়গা নেই। বাবা-মা চলে যাবার সময় বাবার চোখে ছিল আমার জন্য লজ্জা আর ঘৃণা।
প্রথমে বাবা-মা, ও একে একে সকল আত্মীয়-স্বজন,এই সমাজ আমার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া আজ আমার ঠায় হয়েছে ফুটপাতে। এক সময় চিরচেনা মুখগুলোই আজ অপরিচিত। আর আজ অপরিচিত মুখগুলোই হয়ে উঠেছে চিরচেনা।
#কল্পবাজ
২০/১১/১৫
No comments:
Post a Comment