Wednesday, 27 March 2019

নীল ডায়েরি থেকে > "লিস্ট" নংঃ ৩৯ রাতগল্প (পর্ব-০২ ) #সাইকো “আমাগো তো ডেইলিই প্রেম করতে হয়, এইডাই তো আমাগো কাম হিহিহি হিহিহি” “আমি সেকথা বলিনি, আসলে দৈহিক সম্পর্ক ব্যাতিত মানুষের প্রেমের আরো একটা পরিভাষা আছে যেটার উৎস হচ্ছে মানুষের অতি পবিত্র মন, আমি আসলে মনের ভালবাসার কথা বলছি।” জরি ভ্রু কুচকে বলে, “কি জানি এইসব জানিনা, বুঝিও না”। পরক্ষণেই খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে জরি। “জরি, আপনার বোঝার জন্য কথাগুলো হয়তো বেশ ভারী হয়ে যাবে তারপরও বলি, আচ্ছা আপনার কি কখনো এমন অনুভূতি হয়েছে যে কারো প্রতি আপনার এক অদ্ভুত আকর্ষণ কাজ করে বা করছে, আসলে কি বলবো? অর্থাৎ যখন আপনি চান যে সে সর্বদাই আপনার পাশেপাশেই থাকুক, আপনার ভালোলাগা মন্দলাগা গুলো সে জানুক গুরুত্ব দিক কিংবা তার ভালোলাগা মন্দলাগা গুলো আপনাকে জানাক, এবং আপনারও নির্দিষ্টভাবে ঠিক তার সাথেই কথা বলতে ইচ্ছে করে, ভালো লাগে। সময় কাটাতে ইচ্ছে করে। তাকে, তার ব্যাক্তিত্বগুলিকে এমনকি সবকিছু কেই। সে যখন দীর্ঘ সময় আপনার থেকে দূরে থাকে আপনার তার সাথে খুনসুটি, হাসি ঠাট্টা কিংবা অজস্র অভিমান সহ এমন অনেক কিছু কিংবা অতি সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম অনূভুতি যা আপনার মনে এক অন্যরকম আবেগ কিংবা ছটফটানির সৃষ্টি করে, নাড়া দেয়। এবং যাকে নিয়ে আপনি হয়তো প্রতিনিয়ত স্বপ্ন দেখেন?..হ্যাঁ, আসলে এরকম সহস্র আবেগ কিংবা অনূভুতির একত্রিত রুপই হচ্ছে ভালবাসা?? এমনটা হয়েছে কখনো আপনার?” না সূচক মাথা নাড়ে জরি। “আসলে, জানেন, এরকম অসংখ্য অনূভুতির শতকরা আশিভাগই মানসিক। যার মাঝে শারীরিক চাহিদার প্রায় অনেকটাই নিষ্ক্রিয় থাকে। এরকম আবেগ খুব সহজে আসেনা, কিন্তু যখন আসে এর ভালো কিংবা খারাপ দুভাবেই এর তীব্রতাগুলো দেখিয়ে দিয়ে চলে যায়। আর আমার সাথেও ঠিক তাই ঘটেছে। একবার নয় জীবনে দু দুবার আমার এমনটা হয়েছে। প্রথমবার ঘটেছিল তখন সদ্য কৈশোরে পা দিয়েছিলাম সবে। আর দ্বিতীয়টী ঘটেছে অতি সম্প্রতি একেবারে মাঝযৌবনে। প্রথম টি ছিলো মায়া আর দ্বিতীয়টি ছিলো ছলনা। ছলনা ভুলে গেলেও মায়া কাটাতে পারিনি। আমি বরং ছলনার গল্পটিই শোনাই। তখন সবেমাত্র ফ্রান্স থেকে ফিল্মমেকিং এর উপরে লেখাপড়া গুটিয়ে দেশে ফিরেছি। বলতে পারেন দেশের ভালোবাসার টানেই ফিরেছিলাম। সময় কাটাতে তাই হাতে ক্যামেরা তুলেছিলাম। সেসময় ঘুরেবেড়ানো কিংবা ফটোগ্রাফিই ছিলো আমার মূল আকর্ষণ ও কর্মযজ্ঞ। এমতাবস্থায়, নিতু নামের এক মেয়ের সাথে আকস্মিক ভাবেই পরিচয়। আর পরিচয় টা পরিণয়ে গড়াতেও বেশি সময় লাগেনি। বলতে পারেন, বেশ আবেগ ও তীব্রতা দিয়েই ভালোবেসেছিলাম নিতুকে। বলা চলে তখন পর্যন্ত আমার চোখে বেশ ভালো মেয়ে ছিলো নিতু। ভূবন ভোলানো হাসিতে মাতাতো চারপাশ! হৃদয়ে অদ্ভুত কাঁপুনি দিয়ে চলে যেতো। খুনসুটি, হাসি ঠাট্টা, বিগত দু এক বছরে একসঙ্গে ঈদ, নিউ ইয়ার, বর্ষা, ফাল্গুন-বসন্ত, ভ্যালেন্টাইনস ডে, জন্মদিন কিংবা পয়লা বৈশাখ কত কি যে পেরিয়েছি, তার ইয়ত্তা নেই। তবে অদ্ভুত ব্যাপার ছিলো কি জানেন? মাঝেমাঝে এবাহানা সে বাহানায় এটা সেটা এমনকি সরাসরি পয়সা কড়ি চাইতো। তারপরও তেমন কিছুই মনে করিনি। তুলে দিতাম নির্দিধায়। তবে একদিন ওর এক প্রতিবেশী ছেলের কাছে ওর ব্যাপারে কিছু কথা শুনে কেমন যেন খটকা লেগে যায় মনে। তারপরও কেন যেন নিজ কান ও সিক্সথ সেন্স কে কেনোক্রমেই বিশ্বাস করাতে পারছিলাম না। মাথায় ক ‘দিন ধরে ব্যাপারটা বেশ ঘুরপাক খেলো। মস্তিষ্কের ভেতরে রীতিমতো ছোটখাটো একটা ঘূর্ণিঝড় বয়ে গেলো। একসময় মন ও মস্তিষ্ক দুটোই বলে বসলো, “হয়ে যাক না একটা পরীক্ষা।” আমিও অমনি সাড়া না দিয়ে পারলাম না। ও আমার পরিবার সম্পর্কে প্রায় সবকিছুই জানতো। আমার বাবা গ্রামের অঢেল সম্পত্তি বিক্রি করে কবে শহরে এসেছিলেন, ব্যাবসা শুরু করেছিলেন ইত্যাদি ইত্যাদি। একদিন আচমকাই বলে বসলাম, বাবার ব্যাবসায় প্রচুর লোকসান হয়েছে আর আমাদের ইন্ডাস্ট্রি টাও বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। শরীফ মাজহার নামে এক ধর্ণাঢ্য ব্যবসায়ী কিনে নিচ্ছেন। যদিও আদৌ শরীফ মাজহার কিনেন নি বরং বাবার কিছুদিনের অবসরের কারণে তাকে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিলো। আরেকদিন তাকে বললাম যে গাড়িটা বুঝি বেচে দিতে হচ্ছে। এমনি করে ধীরে ধীরে ওর মাথায় একরকম গেথে দিতে লাগলাম আমার অর্থনৈতিক অবস্থা শোচনীয় যা হয়তো ক্রমশঃই নিম্নমুখী হচ্ছে। পাকা অভিনেতার মতো দু একদিন তো ওর কাছে ধারও করলাম। আমার অবস্থা সম্পর্কে তথ্য পেতে পারে এমন সব জায়গায়ই মোটামুটি সিলগালা করে দিলাম। একদিন শোনা গেলো বাড়ি নিলামে উঠছে, বাবা আবারো গ্রামে ফিরে যাচ্ছেন। ধীরে ধীরে মাস কয়েকের জন্য নিজেকে পুরোদস্তুর আপাদমস্তক বদলে ফেলা। নিজেকে কেমন যেনো অর্থাভাবে জর্জরিত এক প্রাণী করে তুললাম। এসব করতে গিয়ে নিজেকে মাঝে মাঝে পাগল মনে হতো। মনে হতো আমি কি তবে পাগল হয়ে যাচ্ছি। আমার কি মাথা বিগড়ে গেলো?? না, আমার মাথা বিগড়ে যায় নি ঠিকই কিন্তু নিতুর মন, তার চাওয়া পাওয়াগুলো ক্রমশঃই বিগড়ে যাচ্ছিলো। রোপণকৃত চারাগাছের ফল পেতে শুরু করেছিলাম কেবল। প্রতিক্রিয়াগুলোও বেশ দ্রুতই আসলো, অবশ্য এইছলে যে শুধু ভালবাসার মানুষটিকেই চিনতে শুরু করেছিলাম তা নয়, আশপাশের অনেক শুভাকাংখীদের মুখোশাবৃত চেহারাটাও চামড়া ছেড়ে বেরুতে শুরু করলো। অনেকটা একঢিলে দুইপাখি মরার মতো। বসে বসে “A friend in need is friend indeed” লাইনটা মাথায় বারবার চলে আসতো। সবাই কেমন যেনো এড়িয়ে চলতে চাইতো। মাঝে মাঝে হাসতাম। এদিকে ধীরে ধীরে নিতুর সঙ্গে দুরত্ব বাড়লো, রঙচঙে ভালবাসার রংগুলোও ফিকে হতে লাগলো। পৃথিবীর সবকিছু কেমন এড়িয়ে এড়িয়ে চলতে শুরু করলো। কিন্তু সে দুরত্ব বজায় রাখা খুব খুব খুবই কঠিন ছিলো। কয়েক দিনের ব্যাবধানে দু বার দুটি ভিন্ন ছেলের সঙ্গে নিতুকে আবিষ্কার করলাম, একবার প্রায় চোখাচোখি হয়ে গেলো। নিতু খানিকটা হতভম্ব হলো, বললো আমার বন্ধু। পরবর্তীতে অবশ্য তাদের পরস্পরের অতি ঘনিষ্টতার ব্যাপারটাও আবিষ্কার করে ফেলেছিলাম। মাঝে মাঝে ভাবতাম সব ছেড়েছুড়ে ওকে গিয়ে বলি যে আমি তো আগের মতোই আছি। কিন্তু তাৎক্ষণিক ই মস্তিষ্কের বিচক্ষণতাটা মনের অদ্ভুত দূর্বলতা টাকে সম্পূর্ণরুপে ঢেকে দিতো আর শান্তনা দিয়ে বলতো, ‘ধৈর্য্য ধরো, হয়তো শীঘ্রই নতুন করে চোখ খুলবে’ আর এদিকে আমিও পাকা অভিনেতার মতোই অভিনয় চালিয়ে গেলাম। আমাদের অতি ঠুনকো বিষয়েই কেমন ঘনঘন ঝগড়া বাঁধতে শুরু করলো, আজ এটা তো কাল সেটা নিয়ে। জমতে থাকা অসংখ্য পুঞ্জীভূত মেঘ এবার বিরাট গর্জন আরম্ভ করলো। আমার সাথে একদিন নিতুর তুমুল ঝগড়া বাধলো। সমস্ত অভিযোগ একীভূত হলো। অভিযোগের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে গেলাম আমি। বিরাটাকার ঝগড়ার মাঝখানেই আচমকা নিতু বলেই বসলো, আমার সাথে তার ভালবাসা টা ছিলো তার জীবনের সবচাইতে বড় ভূল। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে ছলনার কাছে ভালবাসা পরাজিত হলো। সে আর এ সম্পর্ক রাখতে চায় না। আমি বেচারা তখন তার কাছে হয়ে গেলাম এক ব্যাবহৃত টিস্যু পেপারের মতো। বিলাসিতা, টাইম পাস, আমার কাছ থেকে এখন আর তার পাওয়ার তেমন কিছুই অবশিষ্ট নেই। পুড়ে যাওয়া সিগারেটের ফিল্টারের মতো এক টোকায় ছুড়ে ফেলে দিলো। ভালবাসার মাটির কলস বছর ঘুরতেই ভেঙে চৌচির। গ্রীষ্মের খরতাপে হৃদয়ও পুড়ে ছাই।


via Facebook https://ift.tt/2HJADkc

No comments:

Post a Comment