Wednesday, 8 May 2019

নীল ডায়েরি থেকে > "লিস্ট" নংঃ ৩৬ সাইকো থ্রিলার শোধ (পর্বঃ০১) লিখাঃএন এম শান্ত ঘুম ভাঙ্গার আগেই আকাশের ফোনে ভেসে আসে একটি ফোনকল। ওপাশ থেকে কি সব চিৎকার শোনা যাচ্ছিল। ঘোলাটে আর্তনাদ আর ঘন নিশ্বাসের আওয়াজ। স্পষ্টভাবে একটা কথাই শোনা গেল, “সব শেষ হয়ে যাবে। সব। ” সকাল সকাল এরকম ফাজলামোর কোনো মানে হয়? নির্ঘাৎ কোনো বন্ধু ফোন করে কোনো মুভির অডিও শুনিয়েছে। কিন্তু গলার আওয়াজগুলো কেমন যেন পরিচিত লাগছিল। কোথায় যেন শুনেছে। ধ্যাৎ! এখন এগুলো নিয়ে মাথা ঘামানোর কোনো মানে হয় না। বিছানা থেকে উঠে ওয়াশরুমে ঢুকল আকাশ । রাতে বার্সার ম্যাচ দেখে ঘুম ভালো হয়নি। হেরে বসে বলদগুলো। গাল দিতে দিতেই ব্রাশ করল। বেরিয়ে মুল দরজার বাইরে রেখে যাওয়া পেপার আর ব্রেকফাস্ট নিয়ে এল। রান্নাবান্না করার ঝামেলায় না গিয়ে সকাল আর রাতের খাবারটা পাশের হোটেল থেকে নিয়ে আসে। ওদেরকে ওভাবেই বলা আছে। সকাল সাড়ে সাতটা আর রাত আটটায় খাবার দিয়ে যায় তারা। একেকদিন খাবারে একেকরকম আইটেম থাকে। ওখানকার বাবুর্চিটা একজন আর্টিস্ট। রান্নাটা তার শিল্প। ইঁদুর ফ্রাই করে দিলেও বোধ হয় অনায়াসে সাবাড় করে দিতে পারবে সে। পত্রিকাটা পড়তে পড়তে কফিতে চুমুক দিচ্ছে আকাশ । আকাশ একদম একা একজন মানুষ। তার পরিবার বলতে কিছু নেই। থাকলেও মনে করার সুযোগ নেই। আজ থেকে পাঁচ বছর আগের কোনও কথাই মনে করতে পারে না সে। অথচ এই পাঁচ বছর সে খুব স্বাভাবিকভাবেই জীবন যাপন করে গেছে। প্রথম প্রথম দুঃস্বপ্ন দেখত। একটা কালো ছায়া প্রকান্ড আকার ধারণ করে গোটা একটা বাড়ি গিলে ফেলছে। একসময় আপনা আপনিই বন্ধ হয়ে গেল এসব। সবকিছু আছে আকাশের , শুধু অতীতটাই নেই। ২২শে ফেব্রুয়ারী ২০০৯। ঘুম থেকে উঠেই আলিশান এক ফ্ল্যাটে নিজেকে আবিষ্কার করল আকাশ । খেয়াল করে দেখল, আগের রাতের কোনো কথাই তার মনে নেই। শুধু আগের কেন, কিছুই মনে পড়ছে না তার। বিছানা ছেড়ে ওয়াশরুমে ঢুকল। বেরিয়ে ফ্ল্যাটের মূল দরজা খুলে ব্রেকফাস্ট আর পেপার নিয়ে ভেতরে আসল সে। ও জানত না যে বাইরে কে বা কেন এগুলে রেখে গেল। যেন স্বতাড়িত হয়ে কাজগুলো করছে। সদ্যপ্রস্তুত একটা রোবট পরিচালিত হচ্ছে একটি দক্ষ হাতে। খেয়ে দেয়ে রেডি হয়ে নিল আকাশ । বনানীর একটা অফিসে যেতে হবে। ওখানেই চাকুরী করে হয়ত। ১৩ই জানুয়ারী ২০১৪। বনানী টাওয়ারের পাশেই থামল ট্যাক্সি। ভাড়া মিটিয়ে অফিসে ঢুকতেই দেখল গেটে পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে। কৌতুহল নিয়ে ভেতরে ঢুকতে গেলে একজন কনস্টেবল বাধা দিল। জোর করল না, চুপচাপ বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। ভেতর থেকে একজন বেগুনি টাই পরা ভদ্রলোক বেরিয়ে এলেন। গোয়েন্দা হবে হয়ত, ভাবছে আকাশ । কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, “আপনি কি আকাশ আলম?” জবাব দিতেই লোকটা হাত বাড়িয়ে দিল। মুহিবুল হাসান নাম লোকটার। ভরাট কণ্ঠে যা বলল, গত রাতে এখানে তিনটি খুন হয়েছে। তিনজনই অফিসে জব করতেন। আকাশ প্রায় থ’ হয়ে গেছে। প্রত্যেকের হাতে একটা নাম্বার ছুড়ি দিয়ে খোদাই করে লেখা। ১৭২। “এটা কোনো সিরিয়াল নাম্বার?” আকাশের প্রশ্নের ভ্রু কুঁচকে জবাব দিলেন গোয়েন্দা, “সেরকম হলে তো একেকজনের হাতে একেক নাম্বার থাকত।” গোয়েন্দা আকাশ কে নিয়ে ভেতরে গেলেন। রায়ান, মিলি আর মামুন খুন হয়েছে। ধপ করে মাটিতে বসে পড়ল আকাশ । খুব কাছের মানুষ ছিল এরা। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবির কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হল আকাশ কে। “রায়ান ছিল খুব কাজপাগল ছেলে। কথা কম বলত, তবে হিউমার অসাধারণ ছিল তার। সহজেই হাসাতে পারত। ওর পরিবার সম্পর্কে তেমন কিছু জানি না আমি। বদ-অভ্যাস নামক কিছুই ছিল না ওর। মিলি খুব ছিচকাঁদুনে স্বভাবের। গোটা অফিস মাথায় করে রাখতে পারত। এমন বাচাল মেয়ে আমি জীবনে দ্বিতীয়টি দেখিনি। আর মামুন একেবারেই সাধারণ একটা ছেলে। তবে গল্প বলায় দারুন দক্ষতা ছিল তার। সাদামাটা কাহিনী বেশ জমিয়ে বলতে পারত।” আকাশের কথা শেষ হতেই টেপ রেকর্ডার বন্ধ করে দিল মুহিবুল হাসান। হালকা চা বিস্কুট খেয়ে চলে আসল আকাশ । বাসায় ঢুকতেই আচমকা মনে পড়ল, সকালে একটা ফোন কল এসেছিল। কিন্তু একটা বিষয় ভাবছে, খটকা লাগছে, অত সকালে ওরা তিনজন অফিসে কি করছিল? ফোনটা বের করে একটা মেসেজ চোখে পড়ল। পরিচিত একটা নাম্বার থেকে আসা মেসেজ, “হ্যাপি বার্থডে।”


via Facebook http://bit.ly/2PV5N9z

No comments:

Post a Comment